শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন
বাংলা নিউজডে ডেস্ক রিপোর্ট : আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণা থেকেই ইমিগ্র্যান্টবিরোধী প্রচারণা শুরু করেছিলেন। সর্বশেষ, তার ভয়ঙ্কর ইমিগ্র্যান্টবিরোধী পদক্ষেপ হচ্ছে অপারেশন জেনাস (জে এ এন ইউ এস)। এই ভয়ঙ্কর পদক্ষেপের মাধ্যমে ৩ লাখ ১৫ হাজার সিটিজেনকে বহিষ্কার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন এবং ইমিগ্র্যান্টবিরোধী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখেন। তিনি শপথ নেওয়ার পরপরই যুদ্ধ ঘোষণা করেন ১০টি মুসলিম দেশের ইমিগ্র্যান্টদের আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। সেই সময় তিনি ১০টি মুসলিম দেশের ইমিগ্র্যান্টদের আমেরিকায় আসা বন্ধ করে দেন।
যদিও প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিক্ষোভ করে এবং আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরাজিত হন। এর পরও তিনি ডাকা, কাগজপত্রহীন ইমিগ্র্যান্ট এবং বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ইমিগ্র্যান্টদের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এসব পদক্ষেপ নিয়ে তিনি আলোচিত এবং সমালোচিত হলেও কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ করছেন না। আদালত তার একটি পদক্ষেপ বন্ধ করছেন, তিনি আরেকটি প্রক্রিয়া বের করছেন।
মেক্সিকো সীমান্তে ওয়াল নির্মাণের বিষয়েও তিনি অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের বহিষ্কারের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। বর্ডারে অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের ঠেকাতে তিনি অতিরিক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেন এবং নতুন নতুন আইন তৈরি করে চলেছেন। অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনীতির একমাত্র হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে ইমিগ্র্যান্টরা।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তথ্য অনুযায়ী, অতীতে অনেকেই আমেরিকায় এসে বিভিন্ন উপায়ে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। যাদের ডিজিটালাইজড ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেই, কেউবা এক নামে আমেরিকায় প্রবেশ করেছেন, অন্য নামে আমেরিকার সিটিজেন হয়েছেন। কারো কারো জন্মতারিখ নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট সমস্যা, নাম, জন্মতারিখের সমস্যা যাদের ছিল, সেই রকম ৩ লাখ ১৫ হাজার সিটিজেনকে চিহ্নিত করেছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির বিশেষ টিম। এর মধ্যে অনেকে রয়েছেন যারা অপরাধের সাথে জড়িত। সিটিজেনশিপ গ্রহণ করার সময় বিচার বিভাগ তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করার সময় তাদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছে এই সিটিজনদের। এদের আস্তে আস্তে বহিষ্কার করা হচ্ছে।
এই অপারেশন জেনাস ২০০৮ সালে শুরু হয়েছিল। সেই সময় ক্রুটিযুক্ত ২০৬ জন সিটিজেনকে চিহ্নিত করা হয় এবং বহিষ্কারের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৮ সালে এই প্রক্রিয়া আবার চালু করেন। অপারেশন জেনাসের প্রথম শিকার হন নিউজার্সিতে বাসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক বালজিন্দর সিং, যার আসল নাম ছিল দোবিন্দর সিং। ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি নিউজার্সির ফেডারেল কোর্ট দুই নামের কারণে তার নাগরিকত্ব বাতিল করে তাকে ডিপোর্টের নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য ৪৩ বছর বয়সী দোবিন্দর সিং ১৯৯১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সানফ্রান্সিসকো এয়ারপোর্ট দিয়ে আমেরিকায় প্রবেশ করেন। কিন্তু কোর্টে তিনি বৈধ পথে আমেরিকায় আসার কাগজ দেখাতে পারেননি এবং নাম যে পরিবর্তন করেছেন তাও জানাননি। প্রথমে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন বালজিন্দর সিং হিসেবে। পরবর্তীতে তিনি মার্কিন সিটিজেনকে বিয়ে করেন এবং বৈধ কাগজের জন্য আবেদন করেন। তার কাগজও হয়েছিল কিন্তু সিটিজেনশিপের আবেদন এবং তার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করার সময় তার দুই নাম ধরা পড়ে।
৩ লাখ ১৫ হাজার সিটিজেনের ফাইল পরীক্ষায় দেখা যায় তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলছে না। ১৯৮০ ও ১৯৯০ সালের প্রথমে হোমল্যান্ড সিকিউরিটিতে ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিস্টেম ছিল না। যে কারণে শুভঙ্করের এই ফাঁকিটি ধরা পড়েনি। অনেকেই বিভিন্ন দেশ থেকে গলাকাটা পাসপোর্ট বা অন্য নামে এসেছিলেন। এখন তাদের ডিজিটাইজড করতে গিয়েই হোমল্যান্ড সিকিউরিটির হাতে ধরা পড়ছে। আবার অনেকে এক নামে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন, কিন্তু তার আবেদনটি খারিজ হয়ে যায়, আবার বিয়ে করেছেন অন্য নামে বা একটি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন বাতিল হওয়ার পর অন্য কোনো উপায়ে বৈধ হয়েছেন। তারাও জেনাসের আওতায় পড়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে অনেক বাংলাদেশিও রয়েছেন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই সমস্যাযুক্ত ৩ লাখ ১৫ হাজার সিটিজেনকে বহিষ্কারের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৭ হাজারের তালিকা আইসকে দেওয়া হয়েছে। এখন তাদের বহিষ্কারের প্রক্রিয়া চলছে। অনেকেই আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, এই তালিকার মধ্যে ৬১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা অপরাধজগতের সাথে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে ৪ শতাধিক মামলা রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ জনের কাছে বন্দুক পাওয়া গিয়েছে, ৮১ হাজার ৬৬০ ডলার মূল্যের হেরোইন পাওয়া গিয়েছে, ১২ হাজার ৫৮৪ ডলার মূল্যের কোকেন পাওয়া গিয়েছে, ১ হাজার ৯৫০ ডলার মূল্যের মারিজোয়ানা পাওয়া গিয়েছে এবং ৮ হাজার ১০০ ডলারের জাল ডলার পাওয়া গিয়েছে।
অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, ৩ লাখ ১৫ হাজার সিটিজেনের মধ্যে ইতিমধ্যে হাজারখানেক সিটিজেনকে আমেরিকা থেকে ডিপোর্ট করে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, যারা এসব সমস্যায় চিঠি পেয়েছেন তাদের অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত। সূত্র : ঠিকানা November 29, 2019